স্বপ্নের পদ্মা সেতু
মোশাররফ শরিফ
স্বপ্ন সত্য হয়, হয় নাকি?
মানুষতো স্বপ্ন দেখে যায়,ভুলে যায়
স্বপ্নের শিয়রে রেখে হাত সারারাত।
প্রমত্ত পদ্মার জলে, ঢেউয়ে ঢেউয়ে
ওকার চোখের জল, সলিল সমাধি
ভাসে ভেলা, ঘরবাড়ি, পার ভাঙা ভাঙি।
স্বপ্নের সোপান বেয়ে বেয়ে দীর্ঘ পথ
পিতার স্বপ্ন কন্যার স্বপ্ন একাকার
দুহাজার এক থেকে একুশ বছর
পঁচিশে জুন বাইশ-শেষ প্রতিক্ষার।
স্বপ্ন নয় পদ্মা সেতু, সত্য সত্য সত্য।
আর কোন ফেরি নেই ঝড় নেই মৃত্যু নেই
এখন প্রবৃদ্ধি শুধু-সম্ভাবনার বাংলাদেশ।
একচল্লিশে উন্নত দেশ স্বপ্নের সোনার বাংলা।
(১৪/০৬/২২; ধানমন্ডি, ঢাকা-১২০৫)
অপ্রেমিক
মোশাররফ শরিফ
কে আসে কে যায়, কেন যে আসে
মুখ থুবড়ে গড়া চাঁদ, দুঃখী ঘুলঘুলি
অলিগলি তস্যগলি, তারার লুকোচুরি
সুরঞ্জনা, চলো জোসনায় ভালোবাসি।
মৌনতার দোলনায় চড়ে এতোটা পথ
ভ্রম-স্বপ্ন-সত্য, জীবনের মায়াবী শপথ
যৌবনের বনে দুজনের নির্জন ভ্রমন
দেহ নয় দেহের অধিক, মায়ার মিলন।
জোনাকির নরোম আলো, মিছে ফাঁদ
মনের খোয়ার, দেহের আধাঁর বিস্বাদ।
বেদনার অতল জল, বিষন্ন ঝোপঝাড়
কাটেনা কষ্টের প্রহর, তোমার আমার।
পৃথিবীর তাবৎ ক্ষত নিহত প্রেম-অপ্রেম, খানাখন্দক
জীবনের মরনের ফুটপাত, তবু মরিতে চাহিনা আমি
হিমছড়ির ঝর্নার জল, পাহাড়ের নির্জনতার আলো
বুকের বামে দুঃখের পাথর চেপে বলি, ভালো আছি।
(১৩/০১/২২, ধানমন্ডি, ঢাকা- ১২০৫)
প্রিয়তমা পৃথিবী
মোশাররফ শরিফ
ছিল সবই ঠিক ঠাক
বাহারী বাতাস রাখঢাক চুন সুরকি পলেস্তারা
উজানের নাও জোনাকির নরোম নরোম আলো
মর্ত্যলোক শুক-শাড়ী নারীর আহ্লাদী আবেশ
কেবলি তোমার নিরুদ্দেশে শব্দহীন সমাবেশ
করোনাম্লান কলরোল বাসুকির শেষ হলাহল
শ্মশানে উপচেপড়া শব গঙ্গার সলিল সমাধি
কেবলি তোমায় খুঁজি।
ছিল সবই ঠিক ঠাক
হিজলের ঘ্রাণ ডাহুকের ডাক অন্তরঙ্গ অতনু
বেহায়া যৌবন মানেনা করোনা তাতা থৈথৈ
নাচে জন্ম নাচে মৃত্যু আদমের পদচিহ্ন মাভৈ।
গালিবের মায়াবী গজল বহে মৃদুমন্দ সমীরন
জীবন বহতা নদী অলি গলি তস্য-গলি তবুও
মহামারী, মুখ নয় মুখোশ হল সভ্যতার নিয়তি
মুখোশে তোমায় খুঁজি।
ছিল সবই ঠিক ঠাক
গোলাভরা ধান গহীন পরান এক গুচ্ছ কদম
খোদার কসম তুমি ল্যুভর মোনালিসার হাসি
বেলির সুবাস আর অম্বরের আতরে কামেশ্বরী
ওড়ে সোনালি ডানার চিল বিকেলের নম্র আকাশ
পৃথিবীর গভীর গভীরতর অসুখ অভাব অম্লজান
প্রিয়জন প্রয়োজন সঙ্গসুখ নিরোগ নীলকণ্ঠ তুমি
এখনো তোমায় খুঁজি।
ছিল সবই ঠিক ঠাক
মানব মানবীর পথ শ্বাপদসংকুল জরা মরা ক্ষরা
অতিমারি অনাহারী দূষণ ধরা, মরিতে চাহিনা তবুও
প্যারিসের প্রেম পরকিয়া হেলেন অন্ধকবি হোমারের
ইন্দ্রজাল আপাদমস্তক শব্দশ্রমিক এক মজুরের
ঘাম কাম কবিতা; মাতৃজঠর থেকে নিক্ষিপ্ত নির্মূল
বাউল, আকণ্ঠ আধারে খুঁজি আলো সভ্যতা সুন্দর
জননীর নির্মল আঙ্গুল।
(ঢাকা, শুক্রবার ২০/০৮/২০২১)
স্ত্রী
মোশাররফ শরীফ
২৫/১২/২০২১
মাতৃজঠরের জল অত:পর মাতৃকোল
সাতসমুদ্দুর সুমধুর নিচিন্তপুর কোহিনূর।
বহুদূর তবু দূরে নও তুমি বউ কথা কও
নির্জন লাজুক পাখি ডাকাতিয়া ডাহুক।
ঝাঁঝাল রোদ চারদিক, আলো আর উষ্ণতা
নিঃসঙ্গ চিবুক নত চোখ মোনালিসার হাসি
কেবলি তোমার ছবি জোসনার নহরে দেখি
মায়াবী আঁধার মুখোমুখি বসিবার বনলতা।
সুদূর ঝর্নার জল অবিরল নির্মল নীলাকাশ
জীবন-জর-মরা নিয়তি আচমকা দীর্ঘশ্বাস
তোমার আমার মিলন যেন জান্নাতি নিয়ামত
তোমার ছাঁয়ায় অফুরান শীতল অন্তিম শয়ান।
করোনা কাব্য
মোশাররফ শরিফ
(প্রিয়জন কবি রোমেন রায়হানকে)
দেখা হলো বেশ মেঘের আড়ালে তুমি
রেলের সন্ধ্যা বাতি তোমার চোখের কোল
চিবুক, চড়ুইভাতির খুনসুটির খাতা চারুলতা
কুহকী করোনা, স্বপ্নের সোনালী পংক্তিমালা।
সন্ধ্যার শঙ্খধ্বনি রেলের হুইসেলে বিবর্ন বিকেল
বাহারি জামদানির জমিনে রূপোলী মেখলা
টিটি গার্ডের হুরোহুরি তোমার বিদায় উৎসব
অস্তমান গোধুলিতে বেপথু একলা বালক।
শূন্যে শঙ্খচিল ওড়ে উরুর উল্কি সুতোকাটা ঘুড়ি
শেয়ালের হুক্কাহুয়া ঝোপঝারে ঝিঝির গান।
এখনও জেগে আমি জেগে নাকি ঘুমে তুমি
কিংবা স্বপ্নের শিয়রে জীবনের আনাগোনা।
ওই দেখো আফ্রোদিতি নাচে সমুদ্র সৈকতে
দূরে রেললাইনের মিলনে হেসে ওঠে কিউপিড।
এখনো শিশুর সান্তনা মাতৃস্তনে জেগে ওঠে পুরুষ
বেড়ে ওঠে ভ্রূণ মাতৃজঠরে, স্বপ্নের সোনার বাংলা।
১৯/০৭/২১, বিকেল ৫টা
করোনা, তুই যাবিনা
মোশাররফ শরিফ
একি করোনা, তুই যাবিনা
দুটি বছর বিশ্বজুড়ে,
একতরফা খবরদারি,
সব মানুষ ঘরবন্দি।
ঘরে-বাইরে মুখোশ পড়ি,
স্যানিটাইজ-সাবান-পানি।
কোভিশিল্ড,সিনোফার্ম,
মডার্না তথা ফাইজার
নাকাল নার্স-ডাক্তার,
হাউসফুল হাসপাতাল।
এই করোনা, তুই পাষাণী
জীবন নিলি অর্ধকোটি
মায়ের বুক, পিতার চোখ
মৃত্যু শোক, শ্মশান ঘাট
পতি-পত্নি, যুব-বৃদ্ধা
হাঁপায় রোগী,কাঁপায় ধরা।
ফুসফুসের শ্বাস নালীতে
অভাব খুব অক্সিজেন,
ডেল্টা আর অমিক্রন
মৃত্যু-মিছিল, ক্রন্দন।
রেস্তোরা বা শপিং মল
খেলার মাঠ, পুঁজোর মঠ
নারী-পুরুষ অসামাজিক
মুখোশ পড়া, প্রেমবিহীন।
ভালোবাসার হৃদয়পুরে,
বাধবো মোরা বাসর ঘর,
করোনাযুদ্ধে তুমি আমি
বেহুলা আর লখিন্দর।
(২/২/২২, ধানমন্ডি)
অভিযানে অগ্নিকান্ড
মোশাররফ শরীফ
গোধুলির আলো মুখে নিয়ে ছুটে চলে অভিযান
পৌষের শীতের রাতে কপোতীর কলতান বাজে
মায়ের বুকের ওমে শিশুদের ঘুমের মোহনা
বাহারী কেবিন-ডেক জুড়ে রাতভর হৈহুল্লোর।
সহসা দপদপিয়ায় বিস্ফোরণ- লেলিহান লঞ্চ
অগ্নির উল্লাসে দাউ দাউ করে জ্বলে অভিযান
উদাসী হামজালাল, আগুনের ফনা একাকার
নারী-শিশু-যুব-বৃদ্ধা যাত্রীসব-শ্মশান শয্যায়।
মরিতে চাহেনা কেউ, ফাতেমা-হালিমা-ময়ফুল
তুমি হে ভরসা প্রভু, অকুল পাথার
নদীর গভীরে খোঁজে জীবনের খেয়া
আনাড়ি সাঁতারু জিতে জীবনের বাজি
তথাপি লঞ্চের মেঝ কংকালের ছাই
নিঃসঙ্গ নদীর কোল কোলাহল অঙ্গার সমাধি।
সুগন্ধার তট দিয়াকুল, সারি সারি শব
দগ্ধ নরনারী-ওরা কারা, কোথা বাড়ি?
বাড়ি আছে-ওরা নেই,
পোড়া দেহ, পোড়া মুখ-পোড়েনা মন-মনন
মৃত্যুর কষ্টিপাথরে সোনা হয় প্রকৃত জীবন
নির্জন নদীতে লঞ্চ অভিযান-কাতর ক্রন্দন।
মানুষ মানুষী
মোশাররফ শরিফ
একটি মানুষ শুন্যে উঠে
হরহামেশা তাসের ঘরে,
চালের ফুটোয় ঝাঁপি টেনে,
মুঠো মুঠো আকাশ দেখে।
তীব্র শীতে, বৃষ্টি এলে
জীবন ঘানি-আত্মগ্লানি
ডাহুক ডাকে বারে বারে,
স্বপ্ন পোড়ে,ফানুস ওড়ে।
দুটি মানুষ চার দেয়ালে,
অংক কষে সারাবেলা,
ঘুমের ঘোরে, পথে পথে
জরা-মরা খবর খোঁজে।
ঘুমপাড়ানি, ঘুম কেড়ে নেয়
চাঁদের আলোয় গাত্রদাহ,
জোনাক জ্বলে,জানলা ছুঁয়ে
কাঁচের ক্ষত, জীবনভর।
একটি মানুষ-দুটি মানুষ,
জন্মথেকে জীবন সিঁড়ি,
আলো-আঁধার,কান্না-হাসি
পিছলে পড়ে, ছুটো ছুটি।
জীবন জুড়ে ভুল-ভ্রান্তি,
সুখ-শান্তি, ক্লান্তি লাগে।
মানুষ-মানুষী প্রেমের চাষা,
দুঃখের লাঙলে সুখের আশা।
বেদনার জল,কামনার মল
সুখ-সন্তাপ, মনুষ্য অমল।
(০৬/০২/২২, শাহবাগ, ঢাকা)